পাপুলের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অংশ হিসেবে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এ দাবি করেন তিনি।
সেলিনা বলেন, “কুয়েতে পাপুলের প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দেশের বহু শ্রমিক; কোটি কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে।
“সেখানে একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে কুয়েতে তিনি সমস্যার সন্মুখীন হয়েছেন। মূলত পাপুল ষড়যন্ত্রে শিকার। আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এসব করা হচ্ছে। ”
অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে দুদকের কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছি।
“আমাদের কোনো গোপন সম্পদ নেই, অবৈধ সম্পদও নেই। যা আছে তার বিবরণ দুদককে দিয়েছি। আমরা আইনের পক্ষে। এই তদন্তে দুদককে সব ধরণের সহযোগিতা করবো।”
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা এবং শ্যালিকা জেসমিন প্রধান দুদকে মুখোমুখি হন। অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দীন দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গত ১২ জুলাই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে নোটিস দিয়েছিলেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা সালাহউদ্দীন।
এর আগে গত ২২ জুন একই অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।
গত ১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দিয়েছে দুদক।
জনশক্তি রপ্তানিকারক পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লক্ষ্মীপুরের আসনটিতে।
ওই নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মূহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপি ঠেকাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করেছিলেন।
পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনাকে এমপি করে আনেন।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা।